গত পর্বে আমরা কম্পিউটারেরর বিভিন্ন
হার্ডওয়্যারের পরিচিতি নিয়ে আলোচনা করে ছিলাম। আর যারা এখনো হার্ডওয়্যার পরিচিতি
পড়তে পারেননি তারা অতি শীঘ্রই পর্বটি দেখে নিন। কারণ পরিচিতি পর্ব ভালভাবে না জানা
থাকলে বাকী পর্ব কিছুই বুঝবেন না। কাজেই দেরী না করে এখান থেকে দেখে নিন পরিচিতি
পর্বটি।
আজ আমরা আলোচনা করব কম্পিউটারের
বিভিন্ন কানেকশন পোর্ট ও কানেক্টর নিয়ে। কারন কানেকশন কম্পিউটারের খুবই
গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা যখন কম্পিউটার অ্যাসেমব্লিং করব তখন বিভিন্ন পোর্টের
সাথে বিভিন্ন কানেকটরের কানেকশন দিতে হবে। আর তখন যদি সেই কানেকশনটি না-ই চিনি তবে
অ্যাসেমব্লিং রেখে শূধু কানেকটরটি খুঁজে খুঁজে হয়রান হতে হবে। এছাড়াও পরবর্তীতে
যখন হার্ডওয়্যার সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলোচনা করব তখনো এই কানেকটর নিয়ে কাজ করতে
হবে। আর তখন না বুঝে ইল্টো-পাল্টা কানেকশন দিলে আপনার পিসিতো বাতিল হবেই আপনিও
বাতিল হয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে। কাজেই কানেকটর ও কানেকশন পোর্ট খুবই ভালভাবে
চিনতে হবে। আসুন তবে চিনে নিই কানেকটর ও কানেকশনস।
১। In Put 220V পাওয়ার পোর্টঃ এটা আপনার
কেসিংএর ভেতরের পাওয়ার সাপ্লাইয়ের পোর্ট। কেসিংয়ের পেছন দিকে তাকালে দেখবেন উপরের
দিকে বড় ছয় কোনা একটি পোর্ট। এটাতে পাওয়ার ক্যাবল সংযোগ করা হয়।
২। পাওয়ার ক্যাবলঃ এটা মেইন ২২০ ভোল্ট
লাইন থেকে পিসিতে পাওয়ার সাপ্লাইয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটাকে পাওয়ার
কর্ডও বলা হয়ে থাকে। এটার এক মাথা ছয় কোনা ও অপর মাথা মেইন ২২০ ভোল্টে সংযোগ
স্থাপনের জন্য তিনটি বা দুইটি পিন থাকে। ছয় কোনার প্রান্তটি কেসিং এর পাওয়ার
পোর্টে লাগানো হয়। এই পাওয়ার কর্ডটি অবশ্যই ভাল এবং বেশী অ্যাম্পিয়ার সাপোর্টেড
হতে হবে। কেননা এই একটি মাত্র ক্যাবল দিয়ে পুরু পিসি এবং মনিটরে পাওয়ার সরবরাহ করা
হয়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে অবশ্য মনিটরের জন্য আলাদা ক্যাবল ব্যবহার করা হয়ে
থাকে।
৩। ATX ২৪ পিন মেইন
পাওয়ার কেবলসঃ এটা পাওয়ার সাপ্লাইয়ের সবচেয়ে বড় কানেক্টর। এটাতে ২০+৪=২৪ টি পিন
থাকে। মাদারবোর্ডে পাওয়ার সরবরাহের জন্য এই পোর্টটি ব্যবহার করা হয়। কোন কোন মাদারবোর্ডের
পাওয়ার কানেক্টর ২০ পিনের হয়। তখন এই ২৪ পিনের ক্যাবলটি থেকে ৪টি পিন আলাদা করে ২০
পিন সংযোগ দেয়া হয়। খেয়াল করে দেখুন ক্যাবলটির এক পাশে ৪টি পিন আলগা। এই আলগা পিন
৪টি বাহিরের দিকে ধাক্কা দিনঅ দেখবেন খুলে যাবে।
৪। ATX ৪ পিন পাওয়ার
কেবলসঃ পাওয়ার সাপ্লাই থেকে বর্গাকৃতি আরেকটি চার পিনের কানেক্টর বের হয়েছে। এটার
তার গুলোর দুটি কাল এবং দুটি হলুদ। এটাকে P4 পাওয়ার
কানেক্টরো বলে। প্রসেসরে ডেডিকেটেড পাওয়ার সাপ্লাইয়ের জন্য এই কানেক্টরটি ব্যবহার
করা হয়। এটাতে +১২ ভোল্ট পাওয়ার থাকে।
৫। ৪ পিন প্যারিফেরাল পাওয়ার ক্যাবলঃ সাদা
মাথার ৪ পিনের কানেক্টরটিকে প্যারিফেরাল পাওয়ার কানেক্টর বলে। এটাতে দুটি কাল,
একটি লাল, ও একটি হলুদ তার থাকে। হার্ডডিস্ক ও অপটিক্যাল ড্রাইভে পাওয়ার
সাপ্লাইয়ের জন্য এটা ব্যবহার করা হয়।
৬। SATA পাওয়ার
ক্যাবলঃ এই ককানেক্টরের মাথাটি থাকে কাল এবং চ্যাপ্টা। এটাকে সিরিয়াল ATA কানেক্টর ও বলা হয়। এটাতেও দুটি কাল, একটি লাল ও একটি
হলুদ তার থাকে।
৭। ফ্লপি ড্রাইভ পাওয়ার ক্যাবলঃ এই
পোর্টটি দেখতে সাদা রংয়ের। এটাকে মিনি কানেক্টর বলা হয়ে থাকে। কখনো কখনো আবার মিনি
মোলেক্স ও বলা হয়। এটাতে ৪টি তার থাকে। এটাতেও দুটি কাল, একটি লাল ও একটি হলুদ তার
থাকে।
৮। সিপিইউ সকেটঃ এটি মাদারবোর্ডে
যুক্ত থাকে। এটি একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট সকেট। এটাতে প্রসেসরটি স্থাপন করা হয়।
এটাতে অনেকগুলো পিন থাকে যা প্রসেসরের সাথে মাদারবোর্ডের সংযোগ রক্ষা করে। শুধু তাই না এটি প্রসেসরটিকে পিনের সাথে চেপে
ধরে রাখে। এটাতে স্টীলের তৈরী একটি ঢাকনা থাকে। তবে ঢাকনার মাঝখানটা ফাঁকা।
৯। মাদারবোর্ড স্ক্রু হোলঃ
মাদারবোর্ডটি কেসিংএর ট্রেতে ঠিকমতো বসানোর জন্য ৬টি ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্র দিয়েই
স্ক্রু প্রবেশ করিয়ে বোর্ডটিকে আটকানো হয়। খেয়াল করলে দেখবেন ছিদ্রটির চার দিকে
সাদা বৃত্ত আঁকা থাকে। ছিদ্রটি অনেকটা ফুলের মতো দোখায়।
১০। সিপিইউ ফ্যান কানেকটরঃ সিপিইউর ফ্যানে
পাওয়ার সরবরাহের জন্য মাদরবোর্ডে ৩ বা ৪ পিনের একটি সাদা রংয়ের কানেক্টর আছে। এটার
নীচে CPU_FAN লেখা থাকে। এটাই সিপিইউ ফ্যান
কানেক্টর।
১১। ATX ২৪ পিন মেইন
পাওয়ার কানেকটরঃ মাদরবোর্ডে পাওয়ার সরবরাহের জন্য ২৪ বা ২০ পিনের একটি কানেক্টর
থাকে। এটা দেখতে সাদা প্লাস্টকের। এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়ার কানেক্টর।
১২। ATX ৪ পিন পাওয়ার
কানেকটরঃ সিপিইউতে +১২ ভোল্ট পাওয়ার সরবরাহের জন্য এই কানেক্টরটি ব্যবহূত হয়। এটা
দেখতে বর্গাকৃতি সাদা বা কাল প্লাস্টিকের হয়।
১৩। Front USB কানেকটরঃ
দুই সারিতে (৫+৫) ১০ পিনের একটি কানেক্টর লক্ষ্য করুন। খেয়াল করুন এর শেষ দিকে ৯
নং পিনটি খালি। নীচের দিকে লেখা আছে F_USB1
অথবা F_USB2 অথবা F_USB3
অথবা F_USB4 অথবা F_USB5 অথবা F_USB6। এটাই ইউএসবি কানেক্টর।
১৪। Front Audio কানেকটরঃ এটা দেখতে অনেকটা ইউএসবি পোর্টের মতোই ১০ পিনের
একটা কানেক্টর। তবে এটাতে ৮ নং পিনটি খালি থাকে। এটার নীচে লেখা থাকে F_AUDIO। এটারও দুই সারিতে (৫+৫) ১০ টি পিন থাকে।
১৫। Front Panel কানেকটরঃ এটা বিভিন্ন মাদরবোর্ডে বিভিন্ন হয়। ফ্রন্ট
প্যানেল কানেক্টরটি সাধারণত ১০ পিনের হয়
তবে ১০ নং পিনটি খালি থাকে। আবার কখনো কখনো ২০ পিনের ও হয়। এটার নীচে লেখা থাকে FP1 অথবা F_PANEL। এটাতে হেডার প্যানেলের মানে কেসিংএর সামনের পাওয়ার
বাটন, রিসেট বাটন, পাওয়ার এলইডি, এইচ ডিডি এলইডি কানেকশন দেয়া
হয়। এটা কোন পিনে কি কানেকশন দিবেন তা মাদরবোর্ডের ম্যানুয়্যাল দেখে নিন। সাধারণত ১,৩ HDD LED, ২,৪ Power LED, ৫,৭ Reset, ৬,৮ পাওয়ার স্যুইচ কানেকশন হয়। ১০ নং পিনটি খালি থাকে।
হয়। এটা কোন পিনে কি কানেকশন দিবেন তা মাদরবোর্ডের ম্যানুয়্যাল দেখে নিন। সাধারণত ১,৩ HDD LED, ২,৪ Power LED, ৫,৭ Reset, ৬,৮ পাওয়ার স্যুইচ কানেকশন হয়। ১০ নং পিনটি খালি থাকে।
১৬। ফ্লপি ড্রাইভ কানেক্টরঃ এটা ৩৪ পিনের একটি কানেক্টর। দুই সারিতে ১৭+১৭ পিন থাকে।
ফ্লপি ড্রাইভকে কানেক্ট করার জন্য এই কানেক্টরটি ব্যবহার করা হয়। এটা দেখতে অনেকটা
আইডিই কানেক্টরের মতো তবে লম্বায় একটু ছোট।
১৭। SATA পোর্টঃ
এই পোর্টটি সাধারণত মাদরবোর্ডের কোনার দিকে থাকে। তবে বিভিন্ন ব্রান্ডের
মাদরবোর্ডের বিভিন্ন যায়গায় হতে পারে। এটি দেখতে প্রায় আধা ইঞ্চির মতো লম্বা এবং
ইংরেজি L অক্ষরের মতো। এটার নীচে লেখা থাকে SATA0, SATA1,
SATA2, SATA3, SATA4 ইত্যাদি। সাতা ড্রাইভের সাথে
মাদরবোর্ডের সংযোগ স্থাপনের জন্য এই পোর্ট ব্যবহূত হয়।
১৮। IDE পোর্টঃ এটা লম্বা
৪০ পিনের একটি পোর্ট। দুই সারিতে ২০+২০=৪০ পিন থাকে। তবে এত সারিতে একটি পিনের কোন
কানেকশন নেই। আইডিই ডিভাইসকে যুক্ত করার জন্য এই পোর্ট ব্যবহূত হয়।
১৯। RAM স্লটঃ মাদরবোর্ডে লম্বা পাশাপাশি দুটি বা তিনটি স্লট থাকে। এর
দুদিকে দুটি প্লাস্টকের লক থাকে। এটাকে RAM স্লট বলে। স্লটের
ভিতরে একটি খাঁজ থাকে। এই খাঁজটি RAM এর প্রকার
ভেদে বিভিন্ন স্থানে হতে পারে। আবার একাধিকও হতো পারে। যেমন RD RAM এ খাঁজ থাকে
দুটি। আবার DDR-1, DDR-2, DDR-3, DDR-4 ইত্যাদি RAM এ খাঁজ থাকে একটি। তবে এক এক RAM এ এক এক স্থানে খাঁজ থাকে। কাজেই এক RAM এর স্লটে অন্য র্যাম বসানো যায় না।
২০। AGP স্লটঃ এটা মাদরবোর্ডের
প্রায় মাঝামাঝি স্থানে থাকে। এই স্লটের এক পাশে একটি খাঁজ থাকে। সাধারণত খয়েরী
রংয়ের হয়ে থাকে। তবে মাদরবোর্ডের ম্যানুফ্যাকচার ভেদে বিভিন্ন রংয়ের হতে পারে।
এটার এক দিকে কখনো কখনো একটি লক থাকে। লকটিকে সকেটের আড়াআড়ি ভাবে হালকা টেনে খোলা
হয়। সকেটটি দেখতে কেমন হবে তা চিত্রটি দেখে চিনে নিন।
২১। সাতা (SATA) ডাটা ক্যাবলঃ এটা
দেখতে চ্যাপ্টা এবং লম্বা। এটা প্রায় আধা ইঞ্চি মোটা হয়। সাধারণত লাল রংয়ের হয়ে
থাকে। তবে কাল বা হলুদ রংয়ের ও হতে পারে। এই ক্যাবলটি মাদরবোর্ডের সাথে এবং অপটিক্যাল
ড্রাইভের সাথে আসে। ক্যাবলটির দুই মাথায় কাল রংয়ের দুটি কানেক্টর থাকে।
কানেক্টরটিতে কখনো কখনো একটি স্টীলের লক থাকে। SATA হার্ডড্রাইভ
অথবা SATA অপটিক্যাল ড্রাইভ থেকে ডাটা
মাদরবোর্ডের আদান-প্রদানের জন্য এই ক্যাবলটি ব্যবহার করা হয়। এটা সাধারণত ৭ পিনের
হয়ে থাকে।
২২। IDE ডাটা ক্যাবলঃ এটা
আইডিই ডিভাইসকে মাদরবোর্ডের সাথে যুক্ত করার জন্য ব্যাবহূত হয়। আইডিই হার্ডড্রাইভ অথবা
আইডিই অপটিক্যাল ড্রাইভকে মাদরবোর্ডের সাথে যুক্ত করার জন্য লাগে। এটা ৪০ পিনের
একটি ক্যাবল। ক্যাবলটির এক দিকে ক্যাবলের সমান্তরাল ভাবে লাল দাগ টানা থাকে। ভাল
করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় ক্যাবলটির কানেক্টরে একটি পিনের কোন কানেকশন নেই।
২৩। ফ্লপি ড্রাইভ ক্যাবলঃ এটা
দেখতে চ্যাপ্টা ও মোটা। ৩৪ টি তারের সমন্বয়ে তৈরী। এটার একদিকের মাঝখানে
কয়েকটি তার প্যাচানো। অনেকটা আইডিই ক্যাবলের মতো তবে আইডিই ক্যাবল থেকে
একটু কম মোটা।
২৪। মাউন্ট সাক্রুঃ এটা দেখতে পিতলের
রংয়ের মতো। এটাকে স্পেসার ও বলাহয়। এর মাথা দুটোর এক দিক মেল এবং অন্য দিক ফিমেল।
মেল অংশটি কেসিংএর বে-তে লাগানো হয়। আর ফিমেল অংশটি থাকে মাদারবোর্ড এর দিকে।
২৫। মাদারবোর্ড স্ক্রুঃ এটা দেখতে
স্টীলের মতো। মাথাটি প্লাস আকৃতির কাটা থাকে। এর মাথায় ছাতা বা ওয়াসার লাগানো থাকে।
২৭। ডিভিডি ড্রাইভ স্ক্রুঃ এটা ও
দেখতে স্টীলের মতো। মাথাটি একটু সরু আকৃতির এবং সামান্য লম্বা। মাথায় প্লাস আকৃতির
কাটা থাকে।
২৮। ব্যাক প্লেটঃ এটা স্টীলের তৈরী
আয়তাকার প্লেট। এটাকে Rear I/O প্যানেল ও বলা
হয়। এই ব্যাক প্যানেলটি মাদারবোর্ডের পেছনের কি বোর্ড, মাউস, ভিজিএ পোর্ট, অডিও
ইন-আউট, মাইক, ইউএসবি পোর্ট, ল্যান পোর্ট ইত্যাদি কানেক্টরের মাপে ছিদ্র করা থাকে।
তাছাড়াও কোন পোর্টটি কিসের তা মার্ক করা থাকে এই প্যানেলে।
আজ কানেকশন পোর্ট সম্পর্কে জানলাম।
ইনশাহ্আল্লাহ আগামী পর্বে এসেমব্লিং করা শুরু করে দেব। সবাই সাথেই থাকবেন।
আর কেমন লাগল তা জানাবেন। কমেন্টস
করবেন আপনার ইচ্ছা মতো। পরামর্শ থাকলে অবশ্যই দিবেন। আপনাদের প্রয়োজনীয়তা ও উৎসাহ
আগামী পর্বগুলো প্রকাশ করতে সাহায্য করবে।
ধন্যবাদ সবাইকে। ভাল থাকবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন